শিগগিরই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির দায়িত্ব পাচ্ছেন কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। এরইমধ্যে শামীমা নাসরিন, তার মা ও বোনের জামাইকে ইভ্যালির নতুন পরিচালনা বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বোর্ডের মিটিংয়ে তাদেরকে নতুন পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে।
এই পরিচালনা পর্ষদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের নিচে নয় এমন কর্মকর্তাকে স্বাধীন পরিচালক হিসেবে রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া নতুন বোর্ডে ই-ক্যাবের একজন প্রতিনিধি থাকবেন। নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের পর আদালতের গঠিত বোর্ডের সদস্যরা পদত্যাগ করতে পারবেন। আদালত তাদেরকে এই স্বাধীনতা দিয়েছেন।
এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।
গত ২৪ আগস্ট বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন।
হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, আদালত নিযুক্ত বোর্ড ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে আবেদনকারীদের নাম কোম্পানির রেজিস্টারে নিবন্ধন করতে সব প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবে। বোর্ড নিযুক্ত অডিট ফার্মকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইভ্যালির অডিট সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। অডিট ফার্ম থেকে অডিট রিপোর্ট পাওয়ার পর আদালত নিযুক্ত বোর্ড ইভ্যালি বন্ধ হওয়ার কারণ সম্পর্কে নিজস্ব অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ দেবেন। আগামী ২২ সেপ্টেম্বরের বোর্ড সভায় শামীমা নাসরিন, তার মা ও বোনের জামাইকে ইভ্যালি পরিচালনার বোর্ড সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করবেন। তারপর আদালতের নিযুক্ত পরিচালনা বোর্ড পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারবেন। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এফিডেভিট আকারে হাইকোর্টকে জানাতে হবে।
এদিকে একাধিক সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছে, আদালতের আদেশ অনুযায়ী এরইমধ্যে ইভ্যালির অডিট সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই নতুন পরিচালনা পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে পদত্যাগ করবে সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড।
জানতে চাইলে শামীমা নাসরিনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট দ্রুত ইভ্যালির অডিট সম্পন্ন করতে বলেছেন। অডিট শেষ করে ইভ্যালির নতুন বোর্ডে শামীমা নাসরিন, তার মা ও বোনের জামাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছেন। এছাড়া আদালত নিযুক্ত পরিচালনা বোর্ডকে পদত্যাগের স্বাধীনতা দিয়েছেন। আশা করছি শিগগিরই নতুন পরিচালনা বোর্ডের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে আদালতের নিযুক্ত বোর্ড পদত্যাগ করবে।
এর আগে গত ১০ আগস্ট ইভ্যালি পুনরায় চালু করতে আদালতের মাধ্যমে গঠিত বোর্ডের কাছে আবেদন করেন কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন।
আবেদনে তিনি নিজেকে এবং তার মা ও বোনের স্বামীকে পরিচালনা বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছেন। শামীমা নাসরিনের পক্ষে অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম এ আবেদন করেন।
গত ১৯ এপ্রিল ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে করা রিট মামলায় পক্ষভুক্ত হতে সংস্থাটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের আবেদন গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। আদালত আদেশে বলেন, এখন থেকে এ রিট মামলায় শামীমা নাসরিন ১৫ নম্বর বিবাদী হিসেবে গণ্য হবেন।
ওই দিন রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসাইন বলেছিলেন, ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে করা রিট মামলায় পক্ষভুক্ত আবেদন করেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন, কোম্পানিতে যে ৫০ শতাংশ শেয়ার ছিল, তার মধ্যে ২০ শতাংশ শেয়ার এরইমধ্যে তিনি নিজের মা ও বোনের স্বামীর নামে হস্তান্তর করেছেন। যখন এ মামলা দায়ের করা হয়, তখন এ মামলার বিবাদী হিসেবে তিনি ছিলেন না। তিনি আজকের আবেদনে বলেছেন, তাকে যেন এই মামলা বিবাদী হিসেবে গণ্য করা হয়। তার আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ মর্মে আদেশ দেন এখন থেকে শামীমা নাসরিন এই মামলায় ১৫ নম্বর বিবাদী হিসেবে গণ্য হবেন।
গত বছরের ১৮ অক্টোবর ইভ্যালি পরিচালনার জন্য আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বোর্ড গঠন করেন।
বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, ওএসডিতে থাকা আলোচিত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ ও কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আরিফ বাকের নামের এক গ্রাহক গুলশান থানায় ইভ্যালির মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরদিন বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গত ২১ এপ্রিল চেক প্রতারণার ৯ মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলকে জামিন দেন আদালত। ওই দিন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিন পান তিনি। তবে তার বিরুদ্ধে আরও মামলা থাকায় কারামুক্ত হতে পারেননি রাসেল। শামীমা নাসরিন বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।